পশু খাদ্যের ফসল
পশু খাদ্য বা গো খাদ্য ফসল :-
গবাদি পশুর জীবন ধারণের জন্য খাদ্য অত্যাবশক। যে বস্তু পশুর ক্ষুধা নিরবারণ, ক্ষয় পূরণ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন, বিধি সাধন, রোগ প্রতিরোধ ও বংশবিস্তার ইত্যাদি শারীরভিত্তিক কাজ সম্পাদন হয়, তাকে পশু খাদ্য বলে। এক কথায়, পশুর যা খেয়ে জীবনধারণ করে তাই পশু খাদ্য। যেমন- ঘাস, খৈল ভুসি ইত্যাদি। খাদ্যদ্রব্য পশুর দেহে গৃহীত হয় এবং পরিপাক শোষণ ও বিপাকের পর দেহে ব্যবহৃত হয়। গবাদি পশুর খাদ্য সাধারণত উদ্ভিদ উদ্ভিদ দ্রব্য দ্বারা গঠিত। গবাদি পশুর দেহে খাদ্যের প্রধান কাজ গুলো হল।
১) দেহের বৃদ্ধিসাধন ক্ষয় পুরণ ও পুষ্টি সাধন করে।
২) দেহের তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে।
৩) দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪) মাংস ও দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে।
৫) দেহকে সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখে।
… ঘাস বলতে কেউ খাদ্যকে বুঝানো হয়। ইংরেজিতে এগুলোকে ফরেজ বলে। ফরেজ শব্দটি দিয়ে প্রাকৃতিক আদিত্য উপায়ে উৎপাদিত বা চাষকৃত ডাল ও অডাল জাতীয় ঘাস বা গাছের পাতা, যেগুলো গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়, এইসব বুঝায়।
তবে এগুলোর মধ্যে যেসব করে উৎপাদন করা হয়, তাকে কভার গ্রুপ বা সংক্ষেপে হাজার বলে আখ্যায়িত করা হয়। জাত, খাদ্য গুণগত, চাষাবাদ পদ্ধতি ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
পশুখাদ্য বা গোখাদ্য ফসলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব :-
পৃথিবীর অনেক দেশে মাছ ফসলের চেয়ে পশুপালন কিসে অর্থনীতিতে অধিক অবদান রাখে এবং কর্মক্ষেত্রে তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। যে সকল দেশে প্রধান যোগ্য ভূমিকা বহুচারণ বা ঘাস ফসল উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত করা হয়। আমাদের দেশে জনসংখ্যার জন্য বর্ধিত খাদ্য চাহিদা পূরণে খাদ্য ফসল উৎপাদনই কৃষির মুখ্য ক্ষেত্র। আর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্যই ক্রমাগত খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পতিত জমি খন্ডগুলো ক্রমানুসারে চাষের ভুক্ত হতে হতে অধুনা কোন জমি আর পতিত হচ্ছে না। সে কারণে দেশে যে পশু সম্পদ রয়েছে, সেগুলো খাদ্যের যোগান দিতে বিভিন্নভাবে মানব খাদ্য ফসল উৎপাদনের ন্যায় হিসেবে খাস ফসল উৎপাদনের জরুরী হয়ে পড়েছে। পশু খাদ্য বা গো খাদ্য ফসলের অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
নেপিয়ার ঘাস, প্যারা ঘাস, সুদান ঘাস, ফেলন, সারগম এবং ভুট্টার উৎপাদন প্রযুক্তির তালিকা :-
আঁশজাতীয় গো খাদ্যকে খাস বলে। আর যে সব ঘাস চাষাবাদ করে উৎপাদন করা হয়, সেগুলোকে ফডার গ্রুপ বা সংক্ষেপে ফডার বলে। উন্নত জাতের পশু খাদ্য বা গো খাদ্য হল — নেপিয়ার ঘাস, প্যারা ঘাস, সুদান ঘাস, ফেলন, সরগম ভুট্টা ইত্যাদি। নিম্নে এইসব পশু খাদ্য ফলনের উৎপাদন প্রযুক্তির তালিকা আকারে উল্লেখ করা হলো।
১) পরিচিতি ও উপযোগিতা।
২) জলবায়ু।
৩) মাটি নির্বাচন।
৪) ফসলায়ন পদ্ধতি।
৫) ফসলের জাত।
৬) জমি তৈরি।
৭) সার প্রয়োগ মাত্রা ও পদ্ধতি।
৮) বীজ/কাণ্ড/সেট/চারা রোপণ।
৯) আন্ত পরিচর্যা।
১০) ঘাস বা ফসল কর্তন।
১১) ঘাস বা ফসল সংরক্ষণ প্রক্রিয়াজাতকরণ
১২) ফলন
নেপিয়ার ঘাসের উৎপাদন প্রযুক্তি :-
নেপিয়ার ঘাস গ্রামীণ পরিবারভুক্ত একটি ঘাস ফসল। বিসরীয় অঞ্চলের ছাড়া বছরেরই এই ঘর জন্মানো যায়। অববিষুবীয় অঞ্চলের ঠান্ডা মৌসুমী এই ঘাস সপ্তবাস্হায় থাকে এবং গরম হলে বুঝিয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এটি একটি বহুজীবী উদ্ভিদ। এই ঘাস ৮.১% প্রোটিন, ৩৪% আঁশ, ১০.০% খনিজ ও মোট ৪৪.১০% হজম-যোগ্য উপাদান থাকে। বর্তমানে আবাদকৃত নেপিয়ার ঘাসটি হাইব্রিড প্রজাতির, যা বন্য নেপিয়ার সাথে বাজার করে আপন করা হয়েছে। নিম্নমানের বন্য মানের নেপিয়ার ঘাসকে হাতি ঘাস বলা হয়।
প্যারা ঘাসের উৎপাদন প্রযুক্তি :-
প্যারা ঘাস উৎপাদনের জন্য বিষুবীয় আবহাওয়া সবচাইতে উপযোগী। প্যারা ঘাস গ্রামীণ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এই ঘাস খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং প্রচুর পাতার উৎপাদন করে, যা প্রচুর প্রিয় খাদ্য। এই ঘাস সহজে হজম হয় এবং পশু খাদ্য চাহিদার প্রায় এক চতরাংশই এই খাস দ্বারা মেটানো সম্ভব।সুপ্ত প্যারা ৮.১১% আমিষ এবং মদ খাদ্য উপাদান ৫৯.৫৪% ও কাঁচা প্যারা ঘাসে ১.৬৫ পার্সেন্ট আমিষ ও মোট খাদ্য উপাদান 11.40 পার্সেন্ট থাকে যা সম্পূর্ণ হজম যজ্ঞ । হজম খাদ্য উৎপাদন এর দিকে প্যারা ঘাস, গিনি ঘাস, হাতি ঘাস বা স্থানীয় নেপিয়ার ঘাস খুব সুদাম ঘাসের চেয়ে উন্নত। এছাড়াও জমির লবণাক্ত কমাতে এই ঘাস ফসল হিসেবে খুবই উপযোগী।
সুদান ঘাসের উৎপাদন প্রযুক্তি :-
সুদান ঘাস গ্রামীন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত জোয়ার পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি মৌসুম ভিত্তিক ঘাস উৎপাদনের সাথে আবাদ করা যায়। তাজা বা শুকনো উভয় অবস্থায় এই ঘাস পশুকে খাওয়ানো যায়। খাদ্য মানে দিক হতে সুদাম ঘাস ভুট্টার মত। তবে পুষ্পা নয় পূর্বে এই ঘাস পশুর জন্য ক্ষতিকর হাইড্রো ক্যাসিড রসিক এসিড বিদ্যমান থাকে। এ কারণে ফুল তারপর এই ঘাস পশুকে খাওয়াতে হয়। এই খাস একক ভাবে বা অন্য কোন ফসলের সাথে মিশ্র ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। কাণ্ড শক্ত ও গোড়া থাকার কারণে পরিবারের ঘাস সাথে সুদান ঘাসের মিশ্র চার্জ করলে ফলন যেমন বাড়ে তেমনি পশুকে শক্ত নরম খাসের মিশ্রণ সহ আমিষের যোগানো বাড়াতে সম্ভব হয়।
ফেলন উৎপাদন প্রযুক্তি :-
বাংলাদেশে দক্ষিণাঞ্চলের রবি মৌসুমী ডাল ফসল হিসেবে সেলনের আবাদ করা হয়। সিম জাতীয় এই ফসলের গাছ দেখতে অবিকল এই গাছের মতো। রবি মৌসুমের আবহাওয়া এই বৃত্তি সীমিত থাকে। কিন্তু খরিফ মৌসুমী এই ফসলটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে ফসল বোনার এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত করা উপযোগী হয়। ফলনের আজ জাতীয় পদার্থ কোণ এবং এর কান্ড,, শাখা-প্রশাখা ও পাতা খুব নরম থাকার কারণে এই ফসলটি পশু খাদ্য একটি প্রিয় খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রবি ফসল তোমার পরবর্তী কোনো ফসল ফলাতে বিলম্ব হওয়া সম্ভাবনা থাকলে বা জমি কিছুদিনের জন্য পতিত থাকলে খুব কম পরিশ্রম ও কম খরচে, স্বল্প সময়ে ও ফসলের আবাদ করা যায়। সেলুনে উৎপাদনের ভিত্তিতে ১৬-১৮%আমিষ, 0.9 থেকে 1.7% স্নেহপদার্থ, 9 থেকে 13% খনিজ দ্রব্য, ৩০ থেকে ৩৮ পার্সেন্ট আজ জাতীয় পদার্থ বিদ্যমান থাকে।
ভুট্টা উৎপাদন প্রযুক্তি :-
ভুট্টা গ্রামীণ পরিবারের একটি দানাদার ফসল। চাষাবাদের জমি পরিমাণ হিসেবে গোমধরের পরে ভুট্টার স্থান। এছাড়াও ভূত্তাকে তৃতীয় দানা খাদ্যশস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করারও প্রচেষ্টা চলছে। খাদ্য হিসেবে ভোটটা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। পশু খাদ্য হিসেবে ভুট্টার দানা ব্যবহার ব্যাপক। হাঁস-মুরগির খাদ্যের প্রধান উপকরণ হিসেবে দানা গুরো বেশ প্রয়োজন ও জনপ্রিয়। দানা উৎপাদনের উদ্দেশ্যে প্রধানত ভোট তার আবাদ করা হলেও পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর জন্য ভুট্টার আবাদ করা হয়। ভুট্টা গাছ বৃত্তির বিভিন্ন পর্যায়ে পশু খাদ্য হিসেবে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত করা হয়। তবে কাঁচা ঘাস হিসেবে পুষ্পা নয় অবস্থায় বা পুষ্পানন পূর্বে কাণ্ড নরম থাকা অবস্থায় ব্যবহার করা উত্তম।
কমেন্ট করুন;
comment url