তামাক চাষ
তামাক বাংলাদেশের একটি অর্থকারী এবং নেশা জাতীয় ফসল। তামাক solanaceae পরিবারের উদ্ভিদ। বৈজ্ঞানিক নাম : Nicotiana tabacum। বাংলাদেশের রংপুর, কুষ্টিয়া ছাড়াও যশোর, রাজশাহী, সিলেট, বগুড়া, কক্সবাজার ও ময়মনসিংহ এলাকায় তামাকের চাষ হয়।তামাক সাধারণত ধূমপানের উদ্দেশ্যে সিগারেট, বিড়ি, পাইপ ও হুক্কা চিবিয়ে খাওয়ার জন্য জর্দা, তোক্কা এবং নাকে নেওয়ার জন্য নস্যি, মুখে দাঁত মাজার জন্য গুল ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তামাক পাতায় উপক্ষারীয় উপাদান হিসেবে নিকোটিন থাকে। আই তামাক পাতা ভেজানো পানি কীটপতঙ্গ দমন করতে বিশেষ সাহায্য করে। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে বিষাক্ত যৌগের অবশেষ ফসলের মধ্যে। কিন্তু নিকোটিন সালফেট একটি উচ্চমানের জৈব কীটনাশক, যার কোন ক্ষতিকারক অবশিষ্টাংশ ফসলের সাথে থাকেনা এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না। তামাক ছাড়া বিশ্বব্যাপী একটি বিতর্কিত ফসল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন তামাক সেবন করলে মানব দেহের ক্যান্সার বা অনুরূপ দুরারোগ্য ব্যাধির সৃষ্টি হয়।
নেশা জাতীয় ফসলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব :
নেশা জাতীয় ফসল যেমন তামাক, গাঁজা, আফিম ইত্যাদি। এ ফসল গুলোর বেশ কিছু ক্ষতিকর পাশাপাশি রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব। তামাকের মূল উপাদান নিকোটিন একপ্রকারের স্নায়ুবিষ। তামাক পাতা ভেজানো পানি কীটপতঙ্গ দমন করতে বিশেষ সাহায্য করে। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে বিষাক্ত যৌগের থেকে যায় ফসলের মধ্যে। কিন্তু নিকোটিন একটি উচ্চমানের জৈব কীটনাশক যার কোনো ক্ষতিকারক অবশিষ্ট ফসলের সাথে থাকে না এবং স্বাস্থ্যের কোনরকম ক্ষতি হয় না। গাঁজা বা ভাঙের ফুল, পাতা, কান্ড, বীজ সমস্তটাই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত বেঁচে পাওয়া যায় আর ফুলকে পিষে মেলে গাঁজা, হাশিস, চরশ। এতে টেট্রাহাইড্রোক্যানাবিনল খুবই বেশি পরিমাণে থাকে। কারণ এতে থাকে সাইকোঅ্যাকটিভ এজেন্ট। ওষুধ শিল্পের ব্যবহার রয়েছে। আফিম বা পপি বা মরফিন— আফিম গাছের ফল যখন পরিপক্ক হয় তখন জাতীয় দ্রব্য দিয়ে ফসলের গায়ে গভীরভাবে আঁচড় দেওয়া হয়। ৫ থেকে ৬ ঘন্টা পর ফলের আচরের অংশ দিয়ে কফ বের হয়। এটাই হচ্ছে আফিমের কাঁচামাল। এই কস হেরোইন ও মরফিনের পাশাপাশি কিছু ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এই গাছের ফলের বীজকে পোস্তদানা বলে, যা তরকারি হিসেবে পাওয়া যায়। আফিমের দানা, ফল, আটা, পাপড়ি সবগুলোই ঔষধ রূপে ব্যবহারিত হয়। এ নেশাদ্রব্যগুলো ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেবলমাত্র গবেষণা ও ওষুধ তৈরির অনুমতি ব্যবহার রয়েছে।
তামাক উৎপাদনের ধাপ :-
১) জলবায়ু।
২) মাটি
৩) জাত।
৪) বীজ বাছাই।
৫) বীজতলা তৈরি।
৬) বিজ বপন।
৭) জমি তৈরি।
৮) চারা তোলা ও রোপন।
৯) স্যারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি।
১০) অন্তবর্তী পরিচর্যা।
১১) মাথা / আগল ভাঙ্গা।
১২) কুশি ভাঙ্গা।
১৩) রোগ পোকামাকড় দমন।
১৪) ফসল তোলা ও কিউরিং।
১৫) ফলন।
তামাক উৎপাদন কৌশল :-
জলবায়ু : তামাক চাষের জন্য উচ্চ ও আর্দ্র জলবায়ু আর্কান্ত প্রয়োজন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুতে তামাকের চাষ হচ্ছে। ২২-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তামাক ভালো জন্মে। অতিবৃষ্টি এবং পানিবদ্ধতা তামাক চাষের জন্য ক্ষতিকর। ১৪০০-২১০০ মিমি বার্ষিক বৃষ্টিপাত তামাক চাষের জন্য আদর্শ। পাতা পরিপাক্কতায় পৌঁছে বায়ুর আদ্রতা একটু কম থাকা ভালো। পাতা সংগ্রহ কালে বৃষ্টিপাত হলে পাতার গুণগত মান নিম্ন হয়।
মাটি : সব রকম মাটিতেই তামাক হয়। তবে হালকা 10 মাটিতে তামাক ভালো জন্মে। জমি অধিক জৈব পদার্থ যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। মাটিতে পটাশিয়ামের কোন ঘাটতি থাকলে তামাক পাতার স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ ঠিক থাকে না। এজন্য তামাক চাষের জমিতে দুই বছর অন্তত অন্তত সবুজ সার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
প্রজাতি ও জাত : তামাকে দুইটি প্রজাতি ভার্জিনিয়া এবং বিলাতি বা মতিহারি তামা কে দেশে চাষ করা হয়। বাংলাদেশের তামাক উন্নয়ন ভোট নিম্নলিখিত জাতসমূহ এ দেশে আবাদারের জন্য নির্বাচন করছে —
১) সিগারেট তামাক।
২) চুরুট তামাক।
৩) বিড়ি তামাক।
৪) হুক্কা তামাক।
মাথাভাঙ্গা আগর ভাঙ্গা ও প্রেমিং:
গাছে ফল আসার সাথে সাথে আগর/মাথা ভাঙার কাজ শুরু করতে হবে। মাথাভাঙ্গার ফলে তো আমাকে ফলন ভালো হয় এবং উৎকৃষ্ট মানের তামাক তৈরি হয়। ১৫-১৬ টি পাতা রেখে গাছের ফুল সহ dona ভাঙ্গলে আগল ভাঙ্গা বলা হয়। পাগল ভাঙার কয়েকদিন পরেই পাতার ঘোড়া হতে এবং দ্রুত বেড়ে দুর্বল করে ফেলে। তাই খুশি গুলো আট থেকে দশ মিটার হলেই ভেঙে ফেলতে হবে।একে খুশি ভাঙ্গা বা ডিসারিং ভাঙ্গা বলে। তামাক গাছের নিচের তিন-চারটি পাতাকে 20 পাতা বলে এবং ওই পাতাগুলোকে কেটে ফেলতে হবে। হলে খেতে আলো বাতাস ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারে। এতে বাকিগুলোর পুষ্টি হবে। তামাক ৩ থেকে সাড়ে তিন মাসের ফলন। পাতায় তামাকের প্রধান ফসল। তাই উপযুক্ত সময়ে পাতা সংগ্রহ করতে হবে। সিগারেট তামাকের পাতা মাঘ-ফাল্গুন মাসে সংগ্রহ করতে হবে । পাতার রং হলদে সবুজ হলে গোড়ার দিক হতে পাতা তুলে নেওয়া হয়। তামাক পাতা চৈত্র মাস হতে সংগ্রহ করতে হবে। পাতা যখন সংগ্রহ করতে শুরু হবে। একবারে প্রতি গাছে হতে এক থেকে তিনটির বেশি পাতা ভাঙ্গা উচিত নয়। পাতার পরিবর্তে তার ওপর নির্ভর করে চার বারে পাতা সংগ্রহ করতে হবে। তামাক পাতা সংগ্রহের এই প্রক্রিয়াকে প্রেমিং বলে।
তামাক পাতা শুকানো বা কিউরিং :-
তামাক পাতা শুকনো হওয়ার পর তো আমাকে গুণগত মান নির্ভর করে। বেশ কয়েকটি উপায় তামাক পাতা শুকানো বা কিউরিং করা হয়ে থাকে।
১) গর্তে শুকানো : তিন ফুট (৯০ সেমি ) লম্বা, তিন ফুট(৯০ সেমি) চওড়া ও আড়াই ফুট (৭৫সেমি) গভীর করে গর্ত করে গর্তের ভেতরের ও তলায় সে দেওয়া হয়। এরপর হতে নেতিয়ে পড়া আপনাকে পাতা স্তরে স্তরে গর্তে সাজানো হয় এবং ঘর বাদ হলে দিয়ে তা জেলে দেওয়া হয়। এক সপ্তাহের মধ্যে পাতা শুকিয়ে যাবে। পরে প্রয়োজন হলে এসব রৌদ্রে শুকিয়ে দিতে হবে। সাধারণত বিডি, জর্দা, হকো ও নস্যির তামাক এই পদ্ধতিতে শোকানো হয়।
কমেন্ট করুন;
comment url