সবুজ সার ফসল
সবুজ সার (Green manur) :
সংঙ্গা : জমিতে উৎপাদিত ফসলকে খাদ্য উপাদান সরবরাহের উদ্দেশ্যে আমরা যে সকল দ্রব্য জমিতে প্রয়োগ করি, সে সকল দ্রব্য কেই সার বলে। খাদ্য উপাদান সরবরাহকারী যে সকল উদ্ভিদ জৈব দ্রব্য সবুজ থাকা অবস্থায় মাটির সাথে মিশানো হয়, সে সকল দ্রব্য কে সবুজ সার বলে। আর সবুজ সার উৎপাদনকারী ফসলকে সবুজ সার বলা হয়। যেমন ধৈইঞ্চা, শনপাট, মাষকলাই, এরাইচ, কাউপি ইত্যাদি।
সবুজ সার ফসলের বৈশিষ্ট্য :
(ক) সবুজ সার জাতীয় ফসল দ্রুত বর্ধনশীল হতে হয়।এতে বপনের পর স্বল্প সময়ের মধ্যে অধিক পরিমাণ সবুজ সার যোগ করা যায়।
(খ) কাণ্ড ও পাতা খুব নরম ও রসালো হতে হবে, যাতে মাটিতে মেশানোর পর সময়ে পচে না।
(গ) অনুর্বর মাটিতে জন্মানোর জন্যও উপযোগী হতে হবে, যাতে মাটিতে যোগ করে অনুর্বর মাটিকে উর্বর করা যায়।
(ঘ) সবুজ সার ফসল শিম পরিবারের হলে ভালো হয়। এতে বায়বীয় নাইট্রোজেন যোগ করার সুযোগ থাকে।
(ঙ) জীবনকাল যথাসম্ভব ছোট হবে।
(চ) অধিক সংখ্যক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হতে হবে, যাতে পরবর্তী মৌসুমে আরো সবুজ সার উৎপাদন করা সহজ হয়।
(ছ) খুব সহজে ও নূন্যতম খরচে চাষাবাদ করা যায়। এ ধরনের উদ্ভিদকে সবুজ সার হিসেবে নির্বাচন করা হয়।
(জ) সব ধরনের জমিতে বা ব্যাপক পরিবেশ উৎপাদন করা যাবে, এই ধরনের সবুজ স্যার গ্রহণযোগ্যতা বেশি।
(ঝ) রোগবালয় প্রতিরোধ হতে হবে।
সবুজ সার ফসল মাটিতে মেশানোর উপযুক্ততা :
সবুজ ছার ফসল মাটিতে মেশানোর জন্য উপযুক্ত হয়েছে কিনা পেপারে নিম্নলিখিত বিষয় সমূহ নির্বাচনে হবে -
(ক) সবুজ ছার ফসল বপনের পর খুব খুশি অবস্থায় মাটিতে যোগ করে খুব অল্প পরিমাণ ছাড় বা জৈব পদার্থ মাটিতে যোগ করতে হবে। আবার অধিক রয়সের সবুজ সার যোগ করলে তা পচতে বিলম্ব হবে এবং ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।
(খ) সাধারণভাবে গাছ ফুল দেখা গেলে সবুজ সার মাটিতে মেশানোর সময় ধরা হয়।
(গ) সবুজ ছার ফসল খুব লম্বা হলে আসতে বা অন্য কোন ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছোট খণ্ড করে নিতে হবে, তাতে লাঙ্গল দিয়ে অতি সহজে মাটির সাথে মেশানো যায়।
(ঘ) মাটিতে মেশানোর সময় জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আদ্রতা থাকতে হবে, যাতে সহজে পড়তে পারে।
(ঙ) মাটিতে মেশানোর অন্তত ১৫ দিন পর জমি তৈরি করে জমিতে বপন বা রোপন করতে হবে।
সবুজ সার নিশানার পদ্ধতি :
সবুজ সার দু ভাবে মাটিতে মেশানো যায় -
১) ইনসিটো বা স্বস্হানে মিশানো : যে জমিতে সবুজ ছার ফসল উৎপাদন করা হয়, সে জমিতেই কাস্তে ও লাঙ্গনের সাহায্যে সবুজ সার মিশানো হয়।
২) ইভারুচু বা ভিন্নস্থানে মেশানো : যে জমিতে আর ফসল উৎপাদন করা হয় সে জমিতে না মিশিয়ে অন্য জমিতে মেশানো হয়। এই পদ্ধতি কে প্রথমে সবুজ চার ফসল কে কেটে ছোট ছোট এবং পরে পরিবহন করে যে জমিতে করতে হবে সে জমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ খন্ড গুলোকে পরে জমিতে সমানভাবে শিখিয়ে দেওয়া হয় এবং লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করে মাটির সাথে মেশানো হয়।
কৃষিতে সবুজ স্যারের গুরুত্ব :
জমিতে সবুজের রোগের প্রধান উদ্দেশ্য হল জমিতে জৈব দ্রব্য যোগকরুণ। জৈব দ্রব্যই মাটির জীবন। মাটিতে সবুজ ছার প্রয়োগ করলেন নিম্নলিখিত সুফলগুলো পাওয়া যায়।
(ক) জমিতে সবুজ সার যোগ করলে ডানা বন্ধন উন্নত হয়, মাটি, ছাট বা শক্ত হয় না, মাটি সহজে চাষ করা যায়, চাষের ফলে মাটি রোজ চুরি হয়, মাটিতে বাউ চলাচলের সুবিধা হয়, মাটির তাপমাত্রা বজায় থাকে, মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ে ও মাটিতে পানি চলাচল সহজ হয়, মাটিতে গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ভালো হয় ইত্যাদি।
(খ) ফসল উৎপাদনে নাইট্রোজেনের গুরুত্ব অপরিসীম। সবুজ ছারে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রোজেন বিদ্যমান, যা মাটিতে এরপর উদ্ভিদ গ্রহণ করতে পারে। নাইট্রোজেন ছাড়াও সবুজ সার মাটিতে অন্যান্য খাদ্য উপাদান যোগ করে। যেমন- ফসফরাস , পটাশ ইত্যাদি।
(গ) মাটিতে বিদ্যমান কিছু কিছু খাদ্য উপাদানের চুঁয়ানির মাধ্যমে জমি হতে অপচয় রোধ হয়।
(ঘ) সবুজসার যোগ করলে জমির পিএইচ মান নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং খাদ্য উৎপাদনের ব্যবস্থা বৃদ্ধি পায়।
(ঙ) জমিতে সবুজ ছার উৎপাদন করলে কিছু কিছু আগাছা স্থায়ীভাবে দমন হয়।
ধৈঞ্চা, সেলুন এবং শনপাট উৎপাদন প্রযুক্তির তালিকা:
খাদ্য উৎপাদন সরবরাহকারী যে সকল উদ্ভিদ জৈব থাকা অবস্থায় মাটির সাথে মিশানো হয়, এ সকল দ্রব্য কে সবুজসার বলে। আর সবুজ সার উৎপাদনকারী ফসল কে সবুজ সার বলা হয়। যেমন- ধৈঞ্চা, শটপাট, কাউপি, মাসকলা ইত্যাদি।
নিম্নে সবুজ স্যার ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি সম উল্লেখ করা হলো —
১) পরিচিতি ও উপযোগিতা।
২) জলবায়ু।
৩) মাটি নির্বাচন।
৪) উৎপাদন মৌসুম।
৫) জমি তৈরি।
৬) সার প্রয়োগ মাত্রা ও প্রক পদ্ধতি।
৭) বীজ বপন পদ্ধতি।
৮) আন্ত পরিচর্যা।
৯) সবুজ ছার ফসল কে মাটিতে মেশানোর সময়।
১০) ফসল ও গুণগতমান।
সবুজ সার ফসল হিসেবে ধৈঞ্চার উৎপাদন প্রযুক্তি বা কৌশল :
ধৈঞ্চা প্রায় শাখা-প্রশাখা বিহীন সরল কান্ড বিশিষ্ট সিম পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এর কাজ তো নরম ও রসালো, যা মাটিতে যোগ করার কয়েক দিনের মধ্যে সহজে পচে প্রচুর পরিমাণের জৈব দ্রব্য যোগ করে। বিষুবীয় উষ্ণ আদ্র আবহাওয়া ধৈঞ্চার বৃদ্ধির জন্য সহায়ক। উপযুক্ত পরিবেশে এর কাণ্ড ৩-৪ মিটার লম্বা পর্যন্ত হয়। সবুজ স্যার হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও ধৈঞ্চা কে গো হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরিপক্ক হওয়ার পর ধইঞ্চার কার্য শক্ত হয় যা গ্রামীণ অঞ্চলে গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ধৌঞ্চর গবাদি পশুর একটি পুষ্টি সীমিত খাদ্য। আমাদের দেশে দু ধরনের ধৈঞ্চা পাওয়া যায়। সাধারণত ধৈঞ্চা যার বৈজ্ঞানিক নাম Sesbania aculeata ও আফ্রিকান ধৈঞ্চা। সাধারণত ধইঞ্চার মূলে নডিউল থাকে, কিন্তু আফ্রিকান ধইঞ্চার মুল ও কান্ডে উভয় স্থানে নডিউল থাকে। দাঁড়ানো পানিতেও ধৈঞ্চা টিকে থাকতে পারে।
সবুজ সার ফসল হিসেবে শনপাট উৎপাদন প্রযুক্তি বা কৌশল :
শনপাট মূলত একটি তন্ত্র উৎপাদনকারী ফসল। তন্তু হিসেবে পাটের আঁশ ব্যবহারের প্রচলন শুরু হওয়ার আগে শর্ট পাটের আঁশকে বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করা হতো। শনপাটের আঁশ পাটের আঁশ অপেক্ষা দুর্বল ও ছোট। তাই বর্তমানে হিসেবে শনপার্টির আঁশ ও ব্যবহার সীমিত হয়ে পড়েছে। আর এই কারণে সবুজ সার হিসেবে শনপাট ব্যবহৃত হচ্ছে। আঁশ ও সবুজ সার ছাড়া শনপাট গোখাদ্য, কাগজ তৈরি ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শনপাট লিগ্নমিনাস পরিবারের অন্তর্গত গুল্গজাতীয় একটি উদ্ভিদ।
কমেন্ট করুন;
comment url