পাট চাষ (Jute Cultivation)
ভূমিকা :-
পাট বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। আমাদের দেশে পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়। দেশে উৎপাদিত পাটের শতকরা ৭০ ভাগ দেশে ব্যবহার হয়, বাকি ৩০ ভাগ কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য হিসেবে বিদেশে রপ্তানি হয়। পাটের আজ থেকে পাটের সুতা, ব্যাগ, বস্তা, পর্দা, কার্পেট ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। পাটকাঠি থেকে পার্টিকেল বোর্ড, প্রিন্টারের কালি তৈরি হচ্ছে। পাট থেকে উৎপাদিত পলিথিনের বিকল্প পচনশীল ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। পাটের পাতা প্রতিনিয়ত জমিতে মিশে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে, মাটির স্বাস্থ্য ভালো হচ্ছে। পাট Tiliaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি বর্ষজীবী ফসল। আঁশ ফসলের জন্য চার ধরনের পাঠ রয়েছে — দেশি পাঠ, তোষা পাখি, কেনা মেস্তা পাট। পাট পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়। পাট পাতার প্রচুর পরিমাণে ভাইপার থাকে।পাট শাকে লাইকোপিক নামক এক প্রকারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা চারক প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কোচ কে পুনর্জীবিত করতে সহায়তা করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পাট শাকের ভূমিকা অনেক।১০০ গ্রাম পাঁচ ছাকে শক্তি ৭৩ (কিলোক্যলরি), আমিষ ৩.৬ (গ্রাম), লিপিড ০.৬ (গ্রাম), ক্যালসিয়াম ২৯৮(মি.গ্রাম), লৌহ (১১ মি.গ্রাম) ক্যারেটিন ৬৪০০(মি.গ্রাম), ভিটামিন সি ৬৪ (মি. গ্রাম)।
আঁশ জাতীয় ফসলের গুরুত্ব :-
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যের পরেই বস্ত্রের স্থান। বস্ত্রের জন্য প্রয়োজন হয় আঁশের। এই আঁশের কিছু অংশ তৈরি হলেও এর সিংহভাগই আসে উদ্ভিদ থেকে। সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে মানুষ তার প্রয়োজনের তাগিদে আঁশ থেকে বস্ত্র তৈরি করা ছাড়াও চট, থলে, কার্পেট, দড়ি, গদি, মাছ ধরার জাল, কাগজের মগ্ন ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে এক সময় আশ জাতীয় ফসল হিসেবে পাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ থেকে আঁশ পাওয়া যায়, যেমন পাট, মেস্তা, কেনাফ ইত্যাদি উদ্ভিদের কাণ্ড থেকে কার্পাস, শিমুল ইত্যাদি গাছের বীজ থেকে এবং আনারস, এগেভ, সিসাম প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা থেকে আঁশ পাওয়া যায়। আঁশ জাতীয় ফসল গুলোর মধ্যে কোনটি থেকে মিহি, নরম ও মোলায়েম আশ পাওয়া যায়। যেমন – পাাট ও তুলা আবার কোন কোনোটি থেকে অত্যন্ত শক্ত এবং দৃঢ আঁশ পাওয়া যায়।
ব্যবহার অনুসারে উদ্ভিদ থেকে প্রান্ত আঁশ গুলোকে নিম্নলিখিত ৬ ভাগে ভাগ করা যায়।
(ক) বয়ন আঁশ :বস্ত্রকর ও পাটকল গুলোতে বয়ন আঁশ ব্যবহার হয়। এই আজ দিয়ে কাপড় ও কাপড় জাতীয় দ্রব্যাদি সুতা ও দড়ি এবং হুঁশিয়ারি সামগ্রী প্রস্তুত হয়। উৎকৃষ্ট মানের এই আঁশ নমনীয় শক্ত এবং সমান হয়ে থাকে। কার্পাস তুলা, পাট ইত্যাদি বরন আসে অন্তর্ভুক্ত।
(খ) বুরুশ আঁশ : এই আঁশগুলো শক্ত তবে সামান্য নমনীয়। ঝাড়ু ও বুরুশ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদের দাঙ্গা এবং ছোট কান্ড থেকে বুরুশ আঁশ পাওয়া যায়।যেমন নারিকেল ও তালের আঁশ ।
(গ) প্লেটিং ও স্হুল বুনন আঁশ : সাধারণত চ্যাপ্টা ও নমনীয় আঁশ। অপেক্ষাকৃত অধিক সাম্প্রাসারিত আঁশ দ্বারা তৈরি হয়।
(ঘ) ফিলিং আঁশ : এই ধরনের আঁশ লেপ, তোষক, বালিশ ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার হয় যেমন– শিমুলতলা।
(ঙ) কাগজ প্রস্তুতকারী আঁশ : কাস্টর ও টেক্সটাইল আঁশই কাগজ তৈরিতে ব্যবহার হয়। উল্লেখিত প্রায় সকল প্রকার আঁশ দিয়েই কাগজ প্রস্তুত করা যায়।
পাট উৎপাদন প্রস্তুতি তালিকা :-
১) উপযুক্ত আবহাওয়া।
২) জাত করন।
৩) জমি তৈরি।
৪) বীজের পরিমাপ ও বনাম পদ্ধতি।
৫) বীজ শোধন।
৬) বপনের সময়।
৭) বপন দূরত্ব।
৮) সার ব্যবস্থাপনা।
৯) পোকামাকড়ো রোগ বালাই।
১০) আগাছা নিয়ন্ত্রণ।
১১) নিড়ানি ও চারা পাতলা করন।
১২) শেষ ব্যবস্থাপনা।
১৩) পাট কাটা।
১৪) পাট জাগ দেওয়া।
১৫) ফলন।
পাট উৎপাদন প্রযুক্তি বর্ণনা :-
উপযুক্ত আবহাওয়া : পাট উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ার ফসল। পাট উৎপাদন মৌসুমের অনুকূল তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আদ্রতা ৯০%। ১২৫-২০০ সেমি বৃষ্টিপাত পাট চাষের জন্য অনুকূল। পাট বৃদ্ধির প্রাথমিক অবস্থায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত পাটের জন্য ক্ষতিকর, কারণ চার অবস্থায় পাট দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। গাছের দৈহিক বৃদ্ধির সময় বৃষ্টিপাত উচ্চ ফসল সহায়ক।
জমি তৈরি : পাঁচ চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি নির্বাচন করে আড়াআড়ি ভাবে ছয়টি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়।
নিজের পরিমাণ : পাঁচের বীজের অঙ্কুরোদগম ৯০ থেকে ৯৫% হলে ভালো হয়। পুরাতন বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়। পুরাতন ব্রিজ নিম্ন মানের হয়। শিখিয়ে বাপন অপেক্ষা শাড়িতে বুনলে বীজ কম লাগে। সারিতে বপন করলে পাটের আশের ফলত ও গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। শাড়ি পদ্ধতিতে চাষ করলে অন্তত পরিচর্যা সহজ হয়।
কমেন্ট করুন;
comment url