OrdinaryITPostAd

আধুনিক ধান উৎপাদন কৌশল

ধান উচ্চ জলবায়ুতে, বিশেষত পূর্ব-এশিয়ার ব্যাপক চাষ হয়। ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। এর সাথে দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি অতপ্রতোভাবে জড়িত । ঘনবসতিপূর্ণ এদেশের জনসংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে, অপরদিকে বাড়িঘর, কলকারখানা, সড়ক-যানবাহন, হাট-বাজার, জনপদ স্থাপন  এবং নদী ভাঙ্গন ইত্যাদির কারণে আবাদি জমির পরিমান প্রতিনিয়ত কমেছে। তদুপরি রয়েছে রোগ পোকার আক্রমণ-সহ খরা, বন্যা জোয়ারভাটা, লবনাক্ততা, শৈত্যপ্রবাহ, ঘূর্ণিঝড় ও শিলাবৃষ্টির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এইসব প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমিতে বেশি ধান উৎপাদন করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশে ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থায় নিয়ে রয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে ধানের ফলন আরো বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। সনাতন জাতের ধান এবং মান্ধাতার আমলের আবাদ পদ্ধতির মাধ্যমে এই চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব। উচ্চ ফলনকারি (উফশী) ধান ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধানের ফলন বহুলাংশে ভিত্তি করা সম্ভব। সর্বোচ্চ ফলন পেতে হলে ধান চাষের প্রতিটি স্তরে আধুনিক প্রযুক্তি সঠিকভাবে  প্রয়োগ করতে হবে।  




ধান উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তির তালিকা   ( List of modern technologies for rice production ) :


১) সঠিক জাত নির্বাচন। 

২) মানসম্মান অফিস ব্যবহার।  

৩) বীজ বাছাই।

৪) বীজ শোধন। 

৫) জাগ দেয়া। 

৬) বীজতলা তৈরি। 

৭) বীজের পরিমাণ। 

৮) বীজ তলার যত্ন। 

৯) চারার বয়স। 

১০) চারা উঠানো। 

১১) চারা বহন। 

১২) জমি তৈরি। 

১৩) চারা রোপণ৷ 

১৪) চারা রোপনের সময়। 

১৫) আগাছা দমন। 

১৬) সার ব্যবস্থাপনা। 

১৭) সেচ ব্যবস্থাপনা। 

১৮) পোকামাকড় দমন ব্যবস্থাপনা। 

১৯) রোগবালায় দমন ব্যবস্থাপনা  

২০) ফসল কাটা, মারায় ও সংরক্ষণ। 


ধানের জমি তৈরির আধুনিক কৌশল ( Modern land preparation techniques of rice )  :


যেসব এলাকার মাটি অধিক সময় জলমগ্ন থাকার কারণে নরম থাকে সে-সব জমির আগাছা পরিষ্কার করে বিনা চাষে ধান রোপন করলেও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। এসব জমিতে ফলনের ওপর যাছে প্রত্যক্ষভাবে পরিলক্ষিত হয় না। জমির উপরিভাগের মাত্র 8 থেকে 10 সেন্টিমিটার ক্রমাগত চাষে উর্বরতা হারালে কিঞ্চিত গভীর চাষ ভালো ফসল পেতে সাহায্য করে। চাষ সরাসরি ধানের ফলন না বাড়ালেও এতে রোপন পরবর্তী পরিচর্যা সহজতর হয়। মাটির প্রকারভেদে তিন থেকে পাঁচ বার চাষ ও মই দিলেই চলে। জমিতে প্রয়োজন মাটির প্রকারভেদ ২-৩ টি চাষ ও মই দিতে হবে, যেন মাটি থকথকে ও কাদাময় হয়। জমি উঁচু-নিচু থাকলে কোদাল দিয়ে সমান করে নিতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে, সময়মতো এবং উত্তমরূপে জমি তৈরি করলে প্রাথমিকভাবে যেসব আগাছা জন্মায় তাদের দমন সহজ হয়। 

ভালোভাবে জমি তৈরি করলে যেসব উপকার পাওয়া যায় সেগুলো হল -

— উত্তমরূপে কাদা করে জমি তৈরি করলে বৃষ্টি বা সেচের পানির অপচয় কম হয়। 

— প্রথম চাষের পর অন্তত সাত দিন পর্যন্ত জমিতে পানি আটকে রাখা প্রয়োজন। এর ফলে জমির আগাছা, খড় ইত্যাদি পচে জৈব সারে পরিণত হবে। যা থেকে পরবর্তীতে গাছের খাদ্য হিসেবে নাইট্রোজেন ও অন্যান্য খাদ্য পাদন পাওয়া যাবে। 

— কাদা করে জমি তৈরি করলে মাটিতে অক্সিজেনের শূন্যস্থান সৃষ্টি হওয়ার ফলে নাইট্রোজেন সারের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। 

— উত্তম রূপে কাদা করা জমিতে অতি সহজে চারা রোপন করা যায়। 

— এরকম জমি সমতল হয় এবং সেচের পানি জমিতে সমান ভাবে পৌঁছাতে পারে। 

— শেষ ও মই দেওয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন জমি যথেষ্ট সমতল হয়। শেষ চাষের সময় মোদির তো হারে সার প্রয়োগ করতে হবে। 


ধানের আধুনিক রোপন কৌশল  ( List the modern planting techniques of rice ) : 


বীজতলা তৈরি :- মানসম্মত চারা উৎপাদনের জন্য আদর্শ বীজতলা তৈরি করতে হবে। দোঁআশ ও এটেল মাটি বীজতলার জন্য ভালো  এবং জমি উর্বর হওয়া প্রয়োজন। চাষ ও মই দিয়ে আগাছা ও খড় পচিয়ে ভালোভাবে কাদা করে জমি তৈরি করতে হবে। এবার জমির দৈর্ঘ্য বরাবর ১ মিটার চওড়া তৈরি করতে হবে। দুই পেজের মাঝে ২৫–৩০ সেন্টিমিটার জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। ফাঁকা জায়গা কাদামাটি দিয়ে উঁচু বেড তৈরি করা যায় এবং এতে নালা তৈরি করা সম্ভব। বেডের উপরে মাটি বাস বা চ্যাপ্টা লাঠি দিয়ে সমান করতে হবে।বীজতলা বেশি কাদাময় হলে কয়েক ঘণ্টা শুকিয়ে নেওয়ার পর সমভাবে বীজ বোনা দরকার। ২ পিসতলার নালা তৈরি হবে বা পানি কাশেম ছাড়া বিভিন্ন পরিচর্যা করার জন্য চলমান সহজতর হয়।

বীজের পরিমাণ :- সুস্থ সবল যারা পেতে হলে প্রতি বীজতলায় ৩–৪ কেজি বীজ অর্থাৎ প্রতি বর্গ মিটারে ৮০–৮৫ গ্রাম বীজ বুনতে হবে। ১ বর্গ মিটারের চারা দিয়ে ২০–২৫ বর্গমিটার জমি রোপন করা যায়।

বীজতলার যত্ন :- বীজ বপনের পর প্রয়োজনে ৪-৫ দিন পাখি তাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বীজ বপনের ৩-৪ দিন পর চারা পর্যন্ত সেচের পানি দ্বারা নালা ভর্তি করতে হবে। প্রয়োজনে বীজতলায় জমে থাকা অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে হবে। যারা গজানোর পরে কাজ হলুদ হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ইউরিয়া এবং প্রয়োজনে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম জিপসাম উপরি প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া সময় মত আগাছা ও পোকামাকড় দমন করতে হবে। 

চারার বয়স :- অধিক ফসলের জন্য ধানের চারার বয়স আয়ুষ মৌসুমে ২০–২৫ দিন, আমন মৌসুমী ২৫-৩০ দিন, এবং রাতে ৪০–৪৫ দিনের হওয়া উচিত। পাঁচ পাতা বৈশিষ্ট্য ধানের চারা রোপন করা উত্তম যারা সঠিক বয়সে না হলে ধানের ফলন অনেকাংশে কমে যায়। 

যারা উঠানো :- যারা উঠানোর আগে ২০ তলায় প্রয়োজনীয় পানি দিয়ে ভিজিয়ে মাটি নরম করে নিতে হবে। যত্ন সহকারে বীজ তলা থেকে চারা উঠাতে হবে, যাতে চারার কাণ্ড বা গড়া ভেঙ্গে না যায়। ট্রেনিং হচ্ছে রে চারা তোলার পর আছাড় দিয়ে মাটি পরিষ্কার করলে চারার খুবই ক্ষতি হয় এবং রোপিত চারার বাড়- বাড়তি বিলম্বিত হয়। চারার শিখর ছিঁড়ে গেলে রোপনের পর চারার বাড়তির অসুবিধা হয় না। কিন্তু কাণ্ড ভেঙ্গে বা মুছড়ে গেলে  ক্ষতি হয়। সেজন্য চারা তোলার পর পাতা দিয়ে আটি বাধা উচিত নয়। শুকনো ঘর ভিজিয়ে ভাঙতে হবে। 

চারা ভবন :- রোপনের জন্য চারা বহন করার সময় পাতা ও কান্ড মোড়ানো পরিহার করতে হবে। ঝুড়ি বা টুকরিতে সারি করে সাজিয়ে চারা পরিবহন করা উচিত। বস্তা বন্দী করে চারা বহন করা উচিত নয়। 

চারা রোপন :- রোপণোত্তর সুষ্ঠু পরিচর্যার জন্য যারা সারিতে রোপন করা উত্তম। মৌসুম ও চাঁদ ভেদে শাড়ি দুরত্ব ২০-২৫ সেন্টিমিটার এবং চারা থেকে চারা ১৫-২০ সেন্টিমিটার দূরত্বে রকম করতে হবে। শাড়ি থেকে শাড়ি এবং চারা থেকে চারা দূরত্ব সম্ভব। শাড়িতে যারারোপণ করলে যন্ত্র ব্যবহার এবং প্রতি ইউরিয়া ব্যবহার করে স্যারের খরচ কমিয়ে প্রত্যাশিত পাওয়া যায়। উপরন্ত সঠিক দূরত্বে চারা রোপন করলে প্রত্যেক গাছ সমান আলো বাতাস ও গ্রহণের সুবিধা পায় ফলন ভালো হয়। 

চারা রোপণের স-ময় : নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে ধান চাষ করলে মৌসুম ভেদে ধানের ফলন চার থেকে মন কমে যেতে পারে। সুতরাং অধিক ফলন পেতে হলে সঠিক সময় ধান রোপন করতে হবে। 

আউশ :- এই মৌসুমে ধানের চারা শ্রবণে প্রথম থেকে হাতে শেষ পর্যন্ত রোপন করা যায়। তবে এই মৌসুমের ওপন বা সময় বৃষ্টির জন্য কিছু আগে হলেও ফলনের তেমন কোন পার্থক্য হয় না। ঠিকমতো বৃষ্টি বৈশাখের প্রথমে জমিতে বীজ বপন ও বীজ তোলার চারা তৈরি করা ভালো। 

আমন:- এই মৌসুমে ধানের চারা শ্রবণের প্রথম থেকে ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত রোপন করা যায়। তবে এরপর যতই দেরিতে চারা রোপন করা হবে ফলন আরে কমতে থাকবে। ভাদ্র মাসের পর কোন ধান রোপন করা উচিত নয়। আমনে ১৫–৩০ আষাঢ় বীজ বপন করে ১৫–৩০  শ্রাবনের মধ্যে চারা বপন করে সবচেয়ে বেশি ফলন পাওয়া যায়। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

কমেন্ট করুন;

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪